প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির জিইসি মোড়স্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষায় একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে ভাষা-শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সম্মানিত সদস্য জনাব বোরহানুল হাসান চৌধুরীসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, জনস্বাস্থ্য (পাবলিক হেলথ) বিভাগ, সমাজতত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগ, গণিত বিভাগ, স্থাপত্য বিভাগ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, আইন বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ব্যবসা-প্রশাসন বিভাগ, ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিভাগ ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি ও তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ও ছাত্রীদের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী শামীম সুলতানা, ট্রেজারার প্রফেসর একেএম তফজল হক, রেজিস্ট্রার জনাব খুরশিদুর রহমান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জনাব শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তৌফিক সাঈদ, ব্যবসা-প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক অমল ভূষণ নাগ, ব্যবসা-শিক্ষা অনুষদের সহকারী ডিন এম. মঈনুল হক, স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট স্থপতি সোহেল এম. শাকুর, গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান টুটন চন্দ্র মল্লিক, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিনা আলম চৌধুরী, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য (পাবলিক হেলথ) বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল ইসলাম, ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার দাশ, প্রক্টর আহমদ রাজীব চৌধুরী ও ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান জনাব কাউছার আলম প্রমুখ।
শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করার প্রাক্কালে উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বাঙালি জাতিসত্তা থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্ফূরণের ইতিহাস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ২১ফেব্রুয়ারির মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা প্রকৃত জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়। তিনি ভাষা আন্দোলনের ইতিবৃত্ত ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২৩ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর নির্মম ঔপনিবেশিক শোষণ অব্যাহত রেখেছিল এবং শোষণের হাতিয়ার হিসেবেই তারা ভাষাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। সেসময় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারা, এমনকি তৎকালীন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনের পরিবারও উর্দু ভাষার তোষক ছিল। কারণ, মুসলিম লীগের মুখ্য নেতৃবৃন্দের মুখের ভাষা ছিল উর্দু। যদিও উর্দু ছিল পাকিস্তানের কেবলমাত্র সাড়ে সাত শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা। অন্যদিকে ছাপ্পান্ন শতাংশ লোকের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। তবু পশ্চিম পাকিস্তান উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত করেছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ফলে এই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণমুক্ত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
ড. সেন আরও বলেন, বাঙালিই বিশ্ব-ইতিহাসে প্রথম ভাষার জন্য রক্তদান করে। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন এবং এর জন্য কারাবরণও করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল একটি বার্ষিক পালন যা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব উদযাপন করে। এটি প্রতি বছর 21শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় এবং এটি তাদের মাতৃভাষায় নিজেকে প্রকাশ করার মৌলিক অধিকারের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীদের প্রাক্তন ছাত্র সমিতি হিসাবে, এই দিনটির তাৎপর্য স্বীকার করা এবং ভাষা আমাদের জীবনে যে ভূমিকা পালন করে তা প্রতিফলিত করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩-এর প্রতিপাদ্য হল “শিক্ষা এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য বহুভাষিকতাকে উৎসাহিত করা।” এটি বহুভাষিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের জন্য যে সুবিধাগুলি আনতে পারে তা তুলে ধরে। বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী হিসাবে, আমাদের একটি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং আমরা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কৃতির লোকেদের সাথে কাজ করি। অতএব নিসন্দেহে, আমাদের বিভিন্ন ভাষায় কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষমতা অর্জন করতে হয়।
উপসংহারে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উদযাপন এবং বহুভাষিকতাকে উন্নীত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি তড়িত প্রকৌশল বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রপরিষদের পক্ষ থেকে জিইসি মোড়স্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্যে সকল সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।